শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বহির্বিশ্ব

ট্রাম্পকে আইনের আওতায় আনতেই হবে

বাংলাট্রাক২৪
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৬ : ৪৭



ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীদের হামলার ঘটনা তদন্তে মার্কিন কংগ্রেস যে কমিটি করেছে, তার রিপাবলিকান ভাইস চেয়ার হলেন লিজ চেনি (সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে)। তিনি ওই ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, সেদিন ট্রাম্পের ভাড়াটে বাহিনী যখন ক্যাপিটলে ঢুকে ‘মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝোলাও’ স্লোগান দিয়ে ঝড় তুলেছিল, তখন ট্রাম্প তাঁর উপদেষ্টাদের বলেছিলেন, ‘এটাই তাঁর (পেন্সের) প্রাপ্য’।

ট্রাম্পের সেই হতবাক করার মতো কথাটি আরেকবার আওড়ানো দরকার। কারণ, কথাটি তিনি যখন বলছিলেন, তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। তিনি তাঁর নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সম্পর্কে বলছিলেন, পেন্সকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত এবং সেটিই নাকি তাঁর প্রাপ্য উপযুক্ত সাজা। ট্রাম্পের বিবেচনায় পেন্সকে ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল। কারণ, পেন্স ট্রাম্পের প্রতি যথার্থ আনুগত্য দেখিয়ে বৈধভাবে নির্বাচিত জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান আটকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী লেঠেল বাহিনী শুধু যে কথার কথা হিসেবে ‘মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝোলাও’ স্লোগান দিচ্ছিল, মোটেও তা নয়। তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই ক্যাপিটল হিল ভবনের সামনে একটি ফাঁসিকাষ্ঠ দাঁড় করিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা কংগ্রেস ভবনে ঢুকে পেন্সের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। মাইক পেন্স সেদিন ভবনের ভূগর্ভস্থ নিরাপত্তা কুঠুরিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যদি সেদিন তাঁরা তাঁকে পেয়ে যেতেন, তাহলে এটি নিশ্চিত যে নিদেনপক্ষে তাঁকে সেদিন গণপিটুনির শিকার হতে হতো। ঠিক সেই মুহূর্তে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আরাম করে টিভি দেখছিলেন এবং তাঁর উন্মত্ত অনুসারীদের তাণ্ডব চালাতে দিচ্ছিলেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি গত সপ্তাহে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অধিবেশনে এ তথ্য দিয়েছেন। সেই দুই দলেরই সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যে হামলা হয়েছিল, তা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। ট্রাম্প হেরে গেলে যে এভাবে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান পণ্ড করতে হামলা চালানো হবে, তা কয়েক মাস আগেই ঠিক হয়েছিল। এটি কয়েক মাস আগেই ট্রাম্প জানতেন এবং এতে তাঁর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল।

তদন্ত কমিটি তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে এসেছে, ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষের জয়কে অস্বীকার করতে, ভোট কারচুপির মতো মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে এবং ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তরকে বাধা দিতেই একটি বিস্তৃত ও সমন্বিত চক্রান্ত করেছিলেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটি বলেছে, ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

এসব দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। যে সংবিধানকে রক্ষা করতে একজন প্রেসিডেন্ট বাধ্য, সেই সংবিধানকে উল্টো বিকৃত করার চেষ্টা করেছিলেন নিক্সন। আর নিক্সনের উত্তরসূরি হিসেবে ঠিক একই কাজ করেছেন ট্রাম্প। নিক্সনের মতোই ট্রাম্প কংগ্রেস এবং সংবিধানকে তাঁর বিপজ্জনক ও বিকৃত ইচ্ছার অন্তরায় হিসেবে দেখেছিলেন। নিক্সনের মতো ট্রাম্পও নিজেকে প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মনে করছিলেন।

নিক্সনের মতো ট্রাম্প সংবিধানের ওপর একটি ভয়ানক আঘাত হেনেছিলেন। তিনি তাঁর কাজকারবার দিয়ে বোঝাচ্ছিলেন, প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সমর্থকেরা আইনের ঊর্ধ্বে; তাঁরা সবাই আইনের প্রতিকারমূলক হাত থেকে নিরাপদ। নিক্সনের মতো ট্রাম্পকে ন্যায্য কারণে অভিশংসন করা হয়েছে এবং ন্যক্কারজনকভাবে তাঁকে দুবার অভিশংসন করা হয়েছে। নিক্সনের মতো ট্রাম্পও হোয়াইট হাউস থেকে একপ্রকার পালিয়ে গেছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান এ তদন্ত আমেরিকাকে বড় পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। কমিটির কাজ অব্যাহত রয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে কমিটি আরও তথ্য জানাবে। সেখানে ট্রাম্পের তৎকালীন কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পাওয়া তথ্য তুলে ধরা হবে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ আর একজন কৌতূহলী দর্শক হয়ে থাকতে পারে না।

এ কমিটি ইতিমধ্যে একটি অভিযোগ তৈরি করেছে, যাতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প নির্বাচনের ফল চুরি করার জন্য একটি অবৈধ, পূর্বপরিকল্পিত উদ্যোগের কেন্দ্রস্থলে ছিলেন। ফলে বিচার বিভাগের আর দেরি করা ঠিক হবে না। বিচার বিভাগকে অবশ্যই ক্যাপিটল হিলে সেদিন দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ক্যারোলিন এডওয়ার্ডসের দায়িত্ব এবং আত্মত্যাগকে সম্মান করতে হবে, যিনি তদন্ত কমিটিকে বলেছিলেন, তিনি একজন আমেরিকান হিসেবে মার্কিন সংবিধান রক্ষার জন্য সেদিন ‘তঁার অবস্থানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন’। অ্যাটর্নি জেনারেল গারল্যান্ডকেও অবস্থান নিতে হবে এবং মার্কিন সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা আল–জাজিরার টরন্টোভিত্তিক কলামিস্ট